https://www.varendratimes.com/

5103

rajshahi

সৌদিতে এক বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই, জব্বার এখন রাজশাহীতে

প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫ ১৫:৩১

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ এক বছর সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) কাটিয়েছেন আবদুল জব্বার সরদার (৪৫)। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার হিরানন্দপুর গ্রামে। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছেন তাঁর স্ত্রী আদরি খাতুন। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন জব্বার। তিনি এক চোখ খুলে তাকিয়েছেন, চিকিৎসকেরা আশাবাদী। এতে তাঁদের পরিবারে ফিরে এসেছে স্বস্তি।

হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আদরি খাতুন জানান, তাঁর স্বামী কৃষিকাজ করতেন। বিদেশে যাওয়ার আশায় ধারদেনা করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমান। তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, আর ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।

আদরি বেগম বলেন, সৌদির মাটি ছোঁয়ার পরই দালালের প্রতারণা বুঝতে পারেন জব্বার। তাঁকে ক্লিনারের কাজ দেওয়া হয়। দালালরা তাঁকে বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বিক্রি করে দেয়। তিন বছর কোনো ভালো ফল না পেয়েই দেশে ফিরতে বাধ্য হন। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন। কিন্তু গত বছরের ১০ মে তিনি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। সৌদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর তিনি সেখানকার আইসিইউতে ভর্তি থাকেন।

স্বামীকে দেশে ফেরাতে বহুবার সরকারি দপ্তরে ঘুরেছেন আদরি খাতুন। সৌদি আরবের একটি সংস্থার সহযোগিতায় অবশেষে ২৩ মে ভোরে অচেতন অবস্থায় দেশে ফেরেন জব্বার। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় ভর্তি করানো হয় তাঁকে, কিন্তু চিকিৎসার খরচ সামলাতে না পেরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ২৬ মে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় শনিবার তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ সময় জব্বার চোখ মেলে তাকান।

স্বামীর উন্নতি দেখে আবেগাপ্লুত আদরি খাতুন বলেন, “তিনি আমার সব কথা বুঝতে পারছেন। মুখ দিয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছেন।” পাশে থাকা মেয়ে জলি আরা খাতুন বলেন, “বাবা আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি কথা বললে মুখে হাসির মতো ভাব আসে। তিনি কথা বলার চেষ্টা করছেন।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, আবদুল জব্বার এখন খুব দুর্বল। সৌদি আরবে এক বছর আইসিইউতে থাকায় তাঁর দেহে প্রচুর অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। মাথায় একটি অপারেশন প্রয়োজন। চিকিৎসকেরা আশা করছেন, অস্ত্রোপচারের পর তাঁর জ্ঞান ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর গলায় ‘ট্রাকিওটমি টিউব’ বসানো আছে, যা সৌদিতে বসানো হয়েছিল। আরও কয়েকদিন পর তা সরিয়ে ফেলা হবে। তখন তিনি কথা বলতেও পারবেন।