
https://www.varendratimes.com/
5047
national
ট্রাইব্যুনালে দাখিল হলো চানখাঁরপুল হত্যার অভিযোগপত্র
প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২৫ ০৮:০৪
রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় জুলাই মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে দাখিল করা ওই নথিতে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণ-আন্দোলনের পটভূমি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
নথি অনুযায়ী, ৪ আগস্ট রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারজন শীর্ষ সহযোগী—ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের পরামর্শে কঠোর অবস্থান নেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা সরকারকে ক্ষমতা না ছাড়ার পরামর্শ দেন এবং সেনা ও পুলিশের সমন্বয়ে আন্দোলন দমন পরিকল্পনা তৈরি করেন।
প্রসঙ্গত, ওই রাতে গণভবনে এক গোপন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে সামরিক কর্মকর্তারা তা না করে বরং পদত্যাগের পরামর্শ দেন, যা শেখ হাসিনাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তিনি তখন বলেন, “আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, এখানেই কবর দাও।”
গণভবনে ৪ আগস্ট দুপুর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা একাধিক বৈঠকে শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "যা হবার হবে, আমি ক্ষমতা ছাড়ব না।"
ওই সময় অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী আন্দোলন দমন করতে গুলি চালানোর পক্ষে মত দেন এবং এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কথাও বলেন, যা শুনে এক সেনা কর্মকর্তা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে একটি অচেনা ব্যক্তি বৈঠকস্থলে প্রবেশ করলে বৈঠক শেষ হয়।
নথি অনুযায়ী, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও তাকে পদত্যাগে অনুরোধ করেন, কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। পরে সামরিক কর্মকর্তারা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মাকে বোঝান। এরপর শেখ হাসিনা পদত্যাগে সম্মত হন।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা বিদায় ভাষণ দিতে চাইলেও সেনাবাহিনী তা অনুমোদন দেয়নি। ৫ আগস্ট দুপুরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন এবং পরে দেশত্যাগ করেন।
এই সময়ের মধ্যে চানখাঁরপুল এলাকায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিরস্ত্র মানুষদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের অংশগ্রহণে চালানো এই হামলায় স্কুলছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শহীদ হন।
এই মামলার অন্যতম পলাতক আসামি হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। অভিযোগে বলা হয়, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দেন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট সকাল ৬টায় শাহবাগ থানায় উপস্থিত থেকে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়া আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে সরাসরি গুলির নির্দেশ দেন।
নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৪ জুলাই রাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলার সময় অস্ত্রসহ হামলাকারীদের সহায়তা করে পুলিশ প্রশাসন, যার নেতৃত্বে ছিলেন কমিশনার হাবিবুর রহমান।
প্রসিকিউশনের মতে, ৫ আগস্টের গণ-আন্দোলন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা বিভিন্ন সহিংস কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নেন। তার বিরুদ্ধে দাখিল করা এই অভিযোগপত্র যেকোনো আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থাপন করলেই তাকে দোষী প্রমাণ করা সম্ভব বলে দাবি করা হয়েছে।