
https://www.varendratimes.com/
5031
rajshahi
দুদকের মামলা, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফারুকের পলায়ন
প্রকাশিত : ২৬ মে ২০২৫ ১২:২৪
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ওমর ফারুক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছেন। তিনি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, হেরোইন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, হাট-বাজার ও বালুমহাল দখলসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
রাজশাহীতে তার মালিকানাধীন শতকোটি টাকার বিলাসবহুল ভবন, ফ্ল্যাট, বাগানবাড়ি, শপিংমল, জমিজমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঢাকাতেও তার ফ্ল্যাট ও দামি প্লট রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ফারুক হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন, যেখানে তার বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা রয়েছে।
সম্প্রতি জানা গেছে, দেশে থাকা সত্ত্বেও ফারুক মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভারতের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেছেন, যদিও তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সূত্র জানায়, তিনি এখনো ফোনের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।
ফারুকের সম্পদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ছেলে শাহাদাত বিন জামান শোভন, যিনি ফারুকের বড় মেয়ে নাজিফা হক চৌধুরীর স্বামী। ফারুকের সকল ব্যবসা, জমি, বাড়ি ও সম্পত্তি শোভনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
দুদকের মামলা ও নিষেধাজ্ঞা
অভিযোগ রয়েছে, ফারুক ও তার স্ত্রী নিগার চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ ‘অবৈধ সম্পদ’ এবং ব্যাংক লেনদেনের অসঙ্গতির কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। এছাড়া জুলাইয়ের হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
বাড়ি-গাড়ি ও ব্যবসার তত্ত্বাবধানে শোভন
রাজশাহীতে ফারুকের ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের বিলাসবহুল ভবন রয়েছে, যা থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকার উপার্জন হয়। এছাড়া তার গ্রামের বাড়ি, বাগান, পুকুর, ফ্ল্যাট ও জমির তত্ত্বাবধানও শোভনের দায়িত্বে রয়েছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে ফারুককে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক বলা হয়েছে। গোদাগাড়ী এলাকার অন্তত দেড় ডজন হেরোইন ব্যবসায়ীর সাথে ফারুকের সম্পর্ক ছিল। এদের মধ্যে মাদারপুরের চার ভাই- মনিরুল, মেহেদী, সোহেল ও টিপু ফারুকের আত্মীয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ফারুক টিপুর কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকার একটি মাইক্রোবাস উপহার নিয়েছিলেন।
সম্পদ ও ব্যবসায়ের বিস্তার
ফারুকের গ্রামের বাড়ি তানোরের চৌড়খৌড়ে, যেখানে তার তিনশ বিঘা বাগান, আড়াইশ বিঘা আবাদি জমি ও পুকুর রয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন মৌজায় প্রায় ২৭৫ বিঘা জমি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা। ঢাকায় তিনশ ফিট এলাকায় ১১ কাঠা জমি ও লালমাটিয়ায় পাঁচ কাঠা প্লট রয়েছে তার নামে।
শোভন ও ফারুকের বক্তব্য
ফারুকের মেয়ে নাজিফা জানান, তার স্বামী শোভন ব্যবসা তদারকি করেন না, বরং ফ্ল্যাট ও শপিংমলের ভাড়া তারা নিজেরাই সংগ্রহ করেন। শোভনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। একইভাবে বিএনপি নেতা মিল্লাতের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ফারুকের অবস্থান
ফারুক চৌধুরী বর্তমানে ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। গোদাগাড়ীর আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে ফোনে ফারুক কথা বলেছেন বলে জানা যায়। আজাদ জানান, ফারুক অসুস্থ এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন, তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।