
https://www.varendratimes.com/
1956
rajshahi
প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৩
রাজশাহীর বাঘায় শাহদৌলা সরকারি কলেজ কর্তৃক জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুথানে শহিদ ও আহতদের স্বরণে স্বরণ সভা এবং জুলাই গনঅভ্যুথানের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহসপতিবার (২৮ নভেম্বর’২৪) কলেজ প্রাঙ্গণে প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্বরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম।
স্বাগত বক্তব্যকালে,নতুন স্বপ্নে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বির্নিমানে নিজেদের অবস্থান থেকে নীতি নৈতিকতার সাথে জনগন ও দেশের জন্য কাজ করার আহŸান জানিয়ে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই-আগষ্ট মাসে ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুথানের বিষয়াদি তুলে ধরে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার হোক আমাদের সকলের । বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে শহিদ এবং আহতসহ আন্দোলনে অংশগ্রহনকারি সকলের অবদান স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
স্বরণ সভায়-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রনি আহমেদ (৩০) বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ননা করে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবির পাল্টাপাল্টি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, নির্বিচারে গুলি করা দেখে মনের টানেই আন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলনে গিয়ে নিহতের লাশ আর আহতদের যন্ত্রনা নিজ চোখে দেখেছি। নিজে অন্তত ৩ হাজার মানুষকে গুলবিদ্ধ অবস্থায় দেখেছেন। নিজ হাতে ৭ জনের লাশ বের করেছেন।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে দেখেছেন পেছন থেকে পুলিশ, উপরে চক্কর দেওয়া হেলিকেপ্টার থেকে আশপাশে নির্বিচারে গুলি ছুড়ার দৃশ্য। যা দেখে স্থানীয় লোকজনকে একত্রিত করে আন্দোলনে অংশ নেন । গুলিবিদ্ধ হয়েছেন রনি আহমেদ নিজেও।
তিনি বলেন, ১৯ জুলাই ঢাকার বনশ্রী এলাকার এ বøক,জি বøকসহ রাস্তায় বেরিকেড দেন। মাগরিবের আযান হবে এরকম মূহুর্তে ড্রোন এসে দেখে যাওয়ার পর উপরে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে গুলি ছুড়ছে। পুলিশ-বিজিবি সোসাইটির মধ্যে ঢুকে এভিনিউ রোডে গুলি করা শুরু করলো। সামনের ৬/৭ জন, গুলি লেগে তারা পড়ে গেল। তাদের লাশ নেওয়ার জন্য গুলি করতে করতে ভেতরে ধাওয়া করে চলে আসলো পুলিশ।
সেই সময়ে ,বিজিবির ছোড়া গুলি বাম পায়ের উরু ভেদ করে এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ জায়গায় অনেক রক্তপাত হচ্ছিলো। আশপাশে তেমন কেউ ছিল না, ভাবছিলেন আর বাঁচবেননা। তখন কালেমা পড়া শুরু করেন।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রামপুরার বনশ্রী এলাকার এফ বøকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে জি বøকের ৩ নম্বর রোডের এক মহিলার বাসায় নিয়ে গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। তাৎক্ষনিক একজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে চলে যান । পরে এ্যাডভান্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিপুল সংখ্যক গুলি বিদ্ধ মানুষ। সিট নাই, ফ্লোরে তাদের চিকিৎসা চলছে। আমি ৩ নম্বর রোডের এফ বøকের ২৮ নম্বর বাসায় চলে আসি। সেখান থেকে চুপি চুপি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। ২৬ জুলাই ডাক্তার বললো এখানে আইসেননা না,তুলে নিয়ে যাবে।
পরে ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরলেও ভয়ে নিজ বাসায় ছিলেননা। পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ৫আগষ্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে নিজ বাড়িতে ফেরেন। আগষ্ট মাসের ১০ তারিখ থেকে বাঘা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, গুলির শব্দ এখনো আমার কানে বাজে।
রনি আহমেদ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার রাজশাহীর চন্ডিপুর গ্রামের এলাহি বক্স ওরফে আফাং মিয়ার দ্বিতীয় ছেলে। বাবা পেশায় কৃষক।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন প্রকৌশলী রনি আহমেদ। ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সাইন্স থেকে ইলেট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানী এনারজিসিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড-এ কর্মরত।
অন্যান্যর বক্তব্য রাখেন,প্রভাষক মাসুদ রানা,সাংবাদিক আব্দুল লতিফ মিঞা, ছাত্রদের পক্ষ থেকে মেহেদী হাসান,নাফিজ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মাওলানা হাবিবুর রহমান,গীতাপাঠ করেন প্রভাষক দীনেশ চন্দ্র সরকার। জাতীয় সঙ্গীতের পর শহিদ ও আহতদের স্বরণে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে দেশাত্মবোধক গান, ইসলামী সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মকর্তা,কর্মচারি ছাড়াও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন । অনুষ্ঠান উপভোগ করেন স্থানীয় দর্শনার্থীরা।