
https://www.varendratimes.com/
2198
opinion
প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:০৫
আপনি যদি মনগড়া ধরেই নিয়ে থাকেন হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ভারতের দালাল তবে আপনাকে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের দিল্লি বিরোধী মিছিলকে হাইলাইটস করতে হবে। হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভাজনের যে কাল্পনিক রেখা আঙ্কন করেছি সেটা চরম আত্মঘাতী। সাময়িক নয় বরং এটা দেশ ও জাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হবে।
এদেশের লাখো হিন্দু ধর্মাবলম্বী আছে যারা এদেশীয় কোটি মুসলিমের চেয়ে বেশি দেশপ্রেম ধারণ করে। কাজেই হিন্দু মানেই ভারতের সমর্থক- এমন প্রতিবন্ধীসুলভ চিন্তাভাবনা থেকে আপনাকে বের হতেই হবে। স্বার্থবাদ বা ধর্মভিত্তিক বিভাজনের কারণে আজকে দেশের এই দুর্গতি। এই অসুস্থতা লালন করা মানে দেশের সুস্থতার বারোটা বাজানো।
ভোটের রাজনীতি এবং দেশপ্রেম- আলাদা বিষয়। যে সনাতনী ভাই-বোন, দাদা-দিদি এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছে, এদেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছে তারা আপনার আমার চেয়ে কোন অংশে কম দেশাত্মবোধ ধারণ করে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের দেশপ্রেম আরও অনেকের স্বদেশের প্রতি প্রেমের চেয়েও খাঁটি। ফেসবুকের গুজব এবং কিচ্ছু বিচ্ছিন্নতাকে আপনি উপমায় নিয়ে যে দায় একচেটিয়া চাপাচ্ছেন তা আপনার মক্কা সনদের ভিত্তিতে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেখানেও ছিল? ইতিহাস পাঠ করে তারপর বাতেলা দিবেন।
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই এই মাটির সন্তান। কারো অধিকার কম বা কারো অধিকার এখানে অধিকতর- এই ভ্রান্তি যত দ্রুত ত্যাগ করবেন তত মঙ্গল। সংখ্যালঘু প্রত্যয় মানুষ নিয়ে রাজনীতি করা ব্যবসায়ীদের লাভ-ক্ষতির হিস্যায় জন্মানো কাপুরুষের কাজ! সংখ্যালঘু বলে এদেশে কিছু নাই। এই দেশ আমাদের সবার। চামার-চণ্ডাল, নাপিত-মেথর কারো অধিকার একটুও কম নয়। কাজেই হিন্দু মানেই ভারত প্রেমী- এমন কুচিন্তা থেকে বের হন। তাতে মঙ্গল নিহিত হবে।
ভারত রাস্ট্র ও জনগণের সাথে আমাদের শত্রুতা নাই। আমরা যা অপছন্দ করি তা হিন্দুত্ববাদী উগ্রতাবাদ এবং ভারতের আধিপত্যকামীতা। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের আস্ফালন এবং অপপ্রচারও আমাদের ক্ষুব্ধ ও ব্যাথিত করে। ঐতিহাসিকভাবে ভারত আমাদের বন্ধু রাস্ট্র এবং বৃহত্তর প্রতিবেশি। এখানে-ওখানে পতাকার অবমাননা কাউকেই বড় করছে না। সব মুসলিম রাস্তায় নেমে ভারতের আধিপত্যকামীতাকে প্রটেস্ট করছে না বটে তবে হৃদয়ে কি ঘৃণা চলছে না? আপনি বাংলাদেশের সব হিন্দুকে ভারতের বিরুদ্ধে মিছিলে রাস্তায় কেন আশা করছেন? তারাও যার যার অবস্থান থেকে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ। দেশপ্রেমের পরীক্ষায় তাঁরা ফেণ করবে না।
সকল ধর্মের মধ্যে কিছু কুলঙ্গার আছে, ঐতিহাসিক ভাবেই থাকে। হিন্দু অংশের মধ্যের সেই ক্ষুদ্রাংশকে হাইলাইটস করে যে ক্ষোভ-ঘৃণা ছড়াতে চাইছেন তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ষড়যন্ত্র ও শয়তানি থেকে বিরত হোন। দেশকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালোবাসা জরুরি। যদি লড়াই-সংগ্রাম করতে হয় তবে আপনার সহযোদ্ধা হিসেবে অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বীকে সাথে পাবেন। '৭১' এর লড়াইয়ো পেয়েছিলেন, '২৪- এও সাথে ছিল। প্রয়োজন হলে সব সময় পাবেন। কোন ধর্মের নামে প্যানিক বা ঘৃণা ছড়ানো সভ্য মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়।