
https://www.varendratimes.com/
3091
health
প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারী ২০২৫ ১৬:৩৮
অত্যান্ত বিব্রতকর এবং কষ্টদায়ক একটি সমস্যা হল শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির।বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষই এই অসুখে ভোগে থাকেন। তাই আজকে সবাইকে জানাবো দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় এবং শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় বায়াম সহ অন্যান্য বিস্তারিত কিছু তথ্য।কারণ এই শ্বাসকষ্ট থেকে দেখা দিতে পারে শারীরিক অনেক জটিলতা।
আপনি যদি দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় এবং শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি কি ব্যায়াম করতে হবে এর সম্পর্কে না জানেন তাহলে অবশ্যই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো।
শ্বাসকষ্টের অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে যাদের একটু বয়স বেশি বা যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের শ্বাসকষ্ট হলে অনেক ভয় পেয়ে যান।আপনার যদি শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে কিভাবে বুঝবেন যে শ্বাসকষ্ট হার্টের কারণে হচ্ছে,না ফুসফুসের কারণে হচ্ছে।তো শ্বাসকষ্টের অনেক কারণ রয়েছে যেমন ফুসফুসের অনেক রোগের কারণে হতে পারে, হার্টের কারণে হতে পারে,এ্যাঞ্জাইটি টেনশনের জন্য হতে পারে, রক্ত কমে গেলে হতে পারে।
বায়ু দূষণ বর্তমান সময়ে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মাঝে। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরগুলোতে বাতাস অনেক বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। আমাদের পৃথিবী ভরে যাচ্ছে দূষিত বায়ুতে যার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।এই সমস্যা শিশুদের এবং বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।
এ শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে কয়েকটি যোগব্যায়াম।নিয়মিতভাবে প্রতিদিন এই ব্যায়ামগুলো করার অভ্যাস করলে শ্বাসকষ্ট আপনার ধারের কাছেও ভিরতে পারবে না।চলুন জেনে নিই শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য ব্যায়ামগুলো কি কি।
উওনাসনঃউওনাসন এজমার সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি আসন।তাছাড়া পেটের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অনেক সমস্যা সমাধান করে উওনাসন।নিয়মিত উওনাসন করার অভ্যাস করলে ম্যানুপজের,ইনসামনিয়া সহ মানসিক চাপ, লিভার ও কিডনির ভালো রাখতে দারুণ ভূমিকা পালন করে।
পদ্ধতিঃ দুই পায়ের মধ্যে এক ইঞ্চি মত ফাঁক রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান।পুরো শরীরকে হাঁটু না ভেঙ্গে কোমর থেকে নিচের দিকে ঝাঁকিয়ে দিন।এইভাবে শরীরটাকে নিচের দিকে ঝাঁকিয়ে নিয়ে হামস্টিং টানা লাগা পর্যন্ত থাকুন।এক্ষেত্রে দুই হাঁটুকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে পারবেন।
অনুলোম- বিলোমঃ যোগাভ্যাসের ফল ভালো পাওয়ার জন্য অনুলোম-বিলোম দিয়ে যোগা সেশন শুরু করুন।এজমার সমস্যা ও শরীরের শক্তি বাড়াতে প্রণায়ণ অনেক সাহায্য করে।তাছাড়া হৃদয় যন্ত্র এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে নিয়মিত অনুলোম- বিলোম করতে পারেন।
পদ্ধতিঃ শিরদাঁড়া সোজা রেখে পদ্মাসনে যোগা মেটে বসুন। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে বা নাক চেপে ধরে ডান নাক দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিন।৮-১০এন্ড সেকেন্ড শ্বাস ধরে রেখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে একবার ডান নাক চেপে ধরে বা নাক এবং বাম নাক চেপে ধরে ডান নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন।এভাবে দুই লাখ দিয়ে ১০-১২ বার করুন।
শবাসনঃ শবাসন হয় সব যোগা সেশন এর মাধ্যমে।এই ব্যায়ামের নানান উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে বদহজম,কোষ্ঠকাঠিন্য,শ্বাসকষ্ট দূর করে।মানসিক চাপ কাটিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে অনেক সাহায্য করে। নিয়মিত শবাসন অভ্যাস করলে নার্ভের সমস্যা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
পদ্ধতিঃ পুরো শরীরকে আগলা করে লম্বা হয়ে আপনার যোগা মাটে শুয়ে পড়ুন।দুই হাত শরীরের সাথে লম্বা করে দুই পা সোজা করে রাখুন।হাতের তালু দুটো নিচের দিকে মুখ করে রেখে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকুন যেন মনে হয় আপনার শরীরের মধ্যে কোন প্রাণ নেই।চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের শ্বাস প্রশ্বাস গোনার চেষ্টা করুন। এরকম করে ১০-১৫ মিনিট থাকুন।
শিশুদের মধ্যেও আজকাল দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট বাহা পানের সমস্যা।স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত পানি পান করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহ ফুসফুস ভালো রাখা সম্ভব। চলুন দেখি কি খেলে শ্বাসকষ্ট কমবে এবং ফুসফুস ভালো থাকবে।
ওটস ও বেরীঃ ওটস অনেকেরই সকালের জল খাবারে থাকে।ব্লুবেরি অথবা স্টবেরির সাথে ওটস মিশিয়ে খেতে পারবেন শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে।অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো উপাদান গুলো বেরি জাতীয় ফলে পাওয়া যায়।যা ফুসফুসের সংক্রমণ দূর করতে ভালো কাজ করে।
লেবু পানিঃ অনেকেরই সকাল বেলা ঈষদুষ পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে।ওজন নিয়ন্ত্রণ সহ ফুসফুস ভালো রাখতে এই পানি অনেক ভালো ভূমিকা রাখে।হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে স্বস্তি পাওয়া যায়।
ফুসফুস ভালো রাখার জন্য চিকিৎসকরা বেশকিছু নিয়ম মেনে চলতে বলে থাকেন।ফুসফুসের যত্ন নেওয়া অনেক কঠিন একটি কাজ। বায়ু দূষণ নিয়মিত ধূমপানের অভ্যাস থাকলে এবং আরো কিছু কারণে দেখা দিতে শুরু করে ফুসফুসের সমস্যা।শুধু বয়স বাড়লেই নয়,
টোফুঃ দুধ জাতীয় খাবারে ক্যালসিয়াম প্রোটিনের মতো উপাদান রয়েছে।টোফু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফুসফুসের যত্ন ভালো ভাবে নিতে পারে।টোফুর বিভিন্ন শালার বানিয়ে নিতে পারেন। অচিরেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে এজমা রোগীদের খাবারের বিষয় নিয়ে।শ্বাসকষ্টের সমস্যা কিছু খাবারে কমাতে পারে আবার কিছু কিছু খাবারে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়িয়ে তুলে।শ্বাসকষ্টর লক্ষণগুলো হ্রাস করতে খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর নির্দিষ্ট খাদ্য খাওয়া উচিত।গবেষকরা বলেন টাটকা খাবারের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করার ফলে,
গত কয়েক বছর ধরে হাঁপানের সমস্যা ক্রমাগত ভাবে বেড়েই চলেছে।শাক সবজি এবং তাজা ফল জাতীয় সুষম খাদ্য এজমা বা হাঁপানি রোগীদের গ্রহণ করা উচিত।চলুন জেনে নিই শ্বাসকষ্ট হলে কি খাবার খেতে হবে না।
কৃত্রিম উপাদানঃ ফুড ফ্লেবার,ফুড কালার,ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত কৃত্রিম উপাদান গুলি ফাস্টফুডে পাওয়া যায়। এই খাবারগুলি হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত।
যেসব খাবার খেলে গ্যাস হয়ঃ যে খাবারগুলোতে গ্যাস হয় যেমন মটরশুঁটি,বাঁধাকপি,রসুন,পিঁয়াজ,কার্বনেটেড,ভাজা খাবার।এ খাবারগুলো খেলে ডায়াফ্রমের উপর চাপ সৃষ্টি হয়।এগুলো হাঁপানির লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তুলে।
সালফাইটসঃ ওয়াইন চিংড়ি,আচার যুক্ত খাবার,শুকনো ফল,লেবুর জুস এসব খাবারে সালফেট পাওয়া যায়।এ খাবারগুলি হাঁপানি লক্ষণকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
স্যালিসাইলেটঃহাঁপানির ক্ষেত্রে স্যালিসাইলেট জাতীয় খাবারগুলি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।ওষুধ ও অন্যান্য পণ্যতেও স্যালিসাইলেট পাওয়া যায়।তাছাড়া চা এবং কফি ও অন্যান্য মসলায় স্যালিসাইলেট পাওয়া যায়।
সাধারণত সর্দি কাশি হলেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়।শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। যেমন নিউমোনিয়া,সর্দি কাশি,হৃদরোগের কারণ,পেটের সমস্যা,এলার্জি,গ্যাস ও হজমের সমস্যা,রক্তস্বল্পতা,অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।তবে সব কিছুর জন্য দায়ী ফুসফুসের সমস্যা।
নাকে ধুলাবালি ঢোকার জন্য,স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য,অস্থায়ীভাবে শ্বাসকষ্ট থাকার জন্যও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।হঠাৎ শ্বাসকষ্ট এর সমস্যা হলে বাড়িতেই খুব সহজে ম্যানেজ করা সম্ভব। তবে অনেকদিন থেকে এবং বেশি পরিমাণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।চলুন দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর কয়েকটি ঘরোয়া টিপস জেনে নিন।
শ্বাসকষ্ট হলে সামনের দিকে ঝুঁকে বসতে হবে। এটি করার কারনে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সুবিধা হবে এবং শরীর রিলাক্স হয়ে থাকবে।এরকম করে ঝোঁকে বসার কারণে হাট ও ফুসফুসের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি হয়।এটি করার জন্য চেয়ারের উপর বসে পা কে মাটির উপর সমতল ভাবে রেখে যুগে থাকতে হবে।
আদালতে রয়েছে এন্টি-ইনফ্যামেটরির গুন।যা ফুসফুসের প্রদাহ হ্রাস করতে অনেক সাহায্য করে। হালকা গরম পানির মধ্যে আদা দিয়ে পান করলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
হলুদে রয়েছে অ্যাান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যাান্টি-ইনফ্যামেটরির অনেক গুন।এটি শরীরকে ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করে।দুধের সঙ্গে হলুদ খেলে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা সহজেই দূর করে।এলার্জির সমস্যা এবং হিস্টামিন ওনিঃসরন বন্ধ করতে হলুদের কারকিউমিন বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
ব্ল্যাক কফিতে পাওয়া যায় উপস্থিত ক্যাফেইন যা শ্বাসকষ্ট কমাতে অনেক উপকারী।ক্যাফেইন্টি শাসন আলীর পিসিকে রিলাক্স করে।গবেষকরা বলেন শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে ক্যাফেইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হাঁপানি রোগীরা হঠাৎ করে ঠান্ডা আবহাওয়া,বিছানা ঝাড়া ঝাড়ি করলে,নাকে ধনু বালি লাগলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।হঠাৎ করে এরকম হলে কি করবেন?
কিছু হয়নি বলে রোগীকে সোজা হয়ে বসতে বলুন,এখানে আতঙ্কের কিছু নেই।
ধীরে ধীরে ইনহেলার দুই থেকে তিনটি চাপ নিতে বলুন।
প্রতি চাপ নেওয়ার পর পাঁচ বার শ্বাস নিতে বলুন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন শিশুদের ঠিকমত ভিতরে ওষুধ যাচ্ছে কি না।
বিশ্রাম নিন, ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমলে রোগীকে কাছাকাছি হাসপাতালে নিন।
হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত মাঝেমধ্যে ইনহেলার নিতে থাকুন।
যেকোনো রোগ প্রথমেই লক্ষণ দেখে বুঝা গেলে যথাসময়েই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়। ফলে ওই রোগের কোন জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।কিন্তু বিশেষ করে অনেক মানুষই হাঁপানির ক্ষেত্রে বুঝতে পারেন না তিনি আক্রান্ত হয়েছেন কি না।তাই হাঁপানি বা এজমা হওয়ার ক্ষেত্রে এই পাঁচটি লক্ষণ থাকা খুব জরুরী।
শ্বাসকষ্ট।
বুকের মধ্যে শনশন শব্দ করা।
কাশি।
বুকে চাপ অনুভব করা।
দীর্ঘমেয়াদি কাশি।
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায়, শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়ামসহ আরো বিভিন্ন তথ্য।অবশ্যই মনে রাখবেন সঠিক সময়ে অ্যাজমার চিকিৎসা না হলে তা একসময় প্রাণঘাতী হতে পারে। উপসর্গ দেখা মিললেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
অবশ্যই চিকিৎসকের দেওয়া ইনহেলার ব্যবহার করবেন এবং ইনহেলার ব্যবহার বন্ধ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমানোর উপায় গুলো ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন।