
https://www.varendratimes.com/
3114
festival
প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারী ২০২৫ ২২:৫১
২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান সরকারের কর্তৃক বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলন ছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে।
এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেক ভাষা সৈনিক। তাদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাংলা ভাষা পরবর্তীতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
২১ শে ফেব্রুয়ারি আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে ভাষা, সংস্কৃতি এবং পরিচিতির অধিকার রক্ষার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা বিশ্বজুড়ে ভাষার বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনের প্রতি সম্মান জানায়।
এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আত্মপরিচয়ের অংশ। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করা মানুষের সাহস এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ২১ শে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত।
বক্তব্য - ১
প্রিয় শ্রোতা/শ্রোতিবৃন্দ,
আজ আমরা এখানে একটি অত্যন্ত গৌরবময় এবং হৃদয়স্পর্শী দিন ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সমবেত হয়েছি। ২১ শে ফেব্রুয়ারি, এই দিনটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সারা পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি বিশেষ দিন, একটি সংগ্রামের দিন, একটি আত্মত্যাগের দিন। আজকের এই দিনের মর্ম ও তাৎপর্য আমাদের সকলের জন্য একটি মহৎ শিক্ষা নিয়ে আসে—একটি জাতির ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য কতটা গভীর ভালোবাসা, ত্যাগ এবং সংগ্রাম প্রয়োজন।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক চিরকালীন কালরেখার মতো দিন হিসেবে চিহ্নিত। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ছিল সেই দিন, যখন বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গুলি চালায়, এবং এতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেক ভাষা সৈনিক। তাদের রক্তে রঞ্জিত এই দিনটি আজ আমাদের প্রতিটি হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে, এবং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ভাষার জন্য সংগ্রাম কেবল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, বরং এটি ছিল একটি জাতির আত্মপরিচয় রক্ষার এক অমর লড়াই।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগণ বুঝতে শুরু করে যে, তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞা ও বৈষম্য চলছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক অবিচার, একটি ভাষাগত নিপীড়ন।
তবে বাংলা ভাষাভাষী জনগণের জন্য এটি ছিল শুধু একটি ভাষার সংগ্রাম নয়, এটি ছিল এক জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। বাংলা ভাষা শুধু একটি ভাষা নয়, এটি ছিল বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং আত্মপরিচয়ের মূর্ত প্রতীক। যখন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করল, তখন পূর্ব বাংলার জনগণ চুপ করে বসে থাকার পক্ষপাতী ছিল না। তারা প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল, তাদের মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা এবং সম্মান জানাতে তারা জীবনকে বাজি রেখেছিল।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, একটি দিন যা আজও আমাদের গর্বিত করে তোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, যাদের মধ্যে ছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, অন্যান্য ভাষা সৈনিকরা, যারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে গিয়ে তাদের জীবন হারান, তারা প্রমাণ করেছিলেন যে, একটি ভাষার মর্যাদা এবং এর অধিকারের জন্য আত্মত্যাগই একমাত্র পথ হতে পারে। ১৯৫২ সালের এই দিনে তারা ভাষার জন্য, জাতির জন্য, সংস্কৃতির জন্য এবং মানুষের জন্য জীবন দিয়েছিলেন।
এই শহীদের আত্মত্যাগ কেবল একটি ভাষা আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল একটি জাতির সংগ্রাম—যে সংগ্রামে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদের কণ্ঠস্বর ও জাতির আত্মপরিচয় রক্ষা করেছিল। তাদের আত্মদান একদিকে যেমন ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল, তেমনি তা আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সংস্কৃতির এক নতুন আলো দেখানোর প্রেরণাও ছিল। তারা প্রমাণ করেছিলেন, ভাষা শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির হৃদস্পন্দন, একটি জাতির সত্ত্বা, একটি জাতির অস্তিত্ব।
২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক দিন। কিন্তু এই দিনটি শুধু আমাদের জন্য নয়, এটি পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাভাষী মানুষের জন্য এক আন্দোলন, এক সংগ্রাম। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কো এ সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, কারণ ভাষার অধিকার, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা শুধুমাত্র একটি জাতির না, বরং মানবতার অধিকারের অন্তর্গত।
এই দিনে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। মাতৃভাষা, বা যেকোনো ভাষা, মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ইউনেস্কো এদিনটিকে বিশ্বের ভাষাগুলোর প্রতি সমান মর্যাদা এবং সম্মান প্রদর্শনের দিন হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আমাদের ভাষার প্রতি সম্মান এবং এর মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি বিশ্বজনীন চেতনা তৈরি করেছে, যা মানুষের নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।
আমরা যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি, আমাদের জন্য ২১ শে ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই দিনটি শুধু একটি ভাষার আন্দোলন নয়, বরং এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়, একতা এবং ঐক্যের দিন। যে ভাষায় আমরা কথা বলি, তা আমাদের চিন্তা, অনুভূতি এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। ভাষা শুধু একটি কথার মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি আমাদের সমাজ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ।
বাংলা ভাষার আন্দোলন ছিল স্রেফ একটি ভাষার লড়াই নয়, এটি ছিল একটি জাতির সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। যখন বাংলাভাষী জনগণ তাদের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিল, তারা শুধুমাত্র ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেনি, তারা এক বিশাল জাতির আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আমরা শহীদ ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, এবং তাদের সংগ্রামের আদর্শকে সম্মান করি। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, একটি জাতি তার ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যখন সংগ্রাম করে, তখন সেই সংগ্রাম শুধুমাত্র ভাষার জন্য নয়, এটি জাতির অস্তিত্ব, স্বাধীনতা এবং মর্যাদার জন্য।
বিশ্বজুড়ে অনেক ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে, কিন্তু ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ভাষা রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে সচেতন থাকতে হবে। বাংলা ভাষা, আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের জাতীয় চেতনার মূল স্তম্ভ, আমাদের গর্বের প্রতীক। শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা যা অর্জন করেছি, তা কখনোই ভুলে গেলে চলবে না। ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের সকলের একত্রিত হওয়ার এবং ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এক ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকার করার দিন।
বক্তব্য ২
প্রিয় সঙ্গী ও শ্রোতাগণ,
আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আমাদের ভাষা আন্দোলনের মহান দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে, বাংলাভাষীদের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তদান করেন ভাষা সৈনিকরা। পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিল বের করলে, পাকিস্তানি পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এই নৃশংস ঘটনায় শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেক ভাষা সৈনিক।
তাদের আত্মত্যাগে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা বিশ্বের প্রতিটি ভাষাভাষী মানুষের অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজকের এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ঐক্য, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের একটি অনন্য চিহ্ন, যা কখনোই বিস্মৃত হবে না।
বক্তব্য - ৩
২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ইতিহাসের এক অমর দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে, বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্ররা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দেন। পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে তারা প্রতিবাদে মুখর হয়, কিন্তু সেদিন পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ অনেকে। তাদের আত্মত্যাগে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজও আমাদের গর্ব। ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম এবং একতার দিন।
বক্তব্য - ৪
২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য অমর সংগ্রামের দিন। ১৯৫২ সালে, মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসেন এবং তাদের প্রাণ বিসর্জন দেন। তাদের ত্যাগের ফলে বাংলা ভাষা আজ পৃথিবীজুড়ে সম্মানিত। ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে, আমাদের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের দিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বক্তব্য - ৫
২১ শে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি ভাষার আন্দোলনের দিন নয়, এটি একটি জাতির স্বাধীনতার প্রতীক। ১৯৫২ সালের এই দিনে শহীদরা তাদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা বাংলা ভাষার মর্যাদা লাভ করি। আজকের এই দিনে, আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং নিশ্চিত করি যে, ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে কখনো ভুলে যাব না।
এগুলি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, যা ২১ শে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব এবং ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য তুলে ধরে।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, এক ঐতিহাসিক দিন যা শুধুমাত্র আমাদের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য নয়, বরং একটি জাতির আত্মপরিচয়, ঐক্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দিনটি, ১৯৫২ সালে, বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করা শহীদ ভাষা সৈনিকদের স্মরণে উদযাপিত হয় এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পালিত হয়। এই দিনটির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো, ভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং জাতীয় ঐতিহ্যকে সম্মান জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. ভাষার অধিকার রক্ষা ও জনগণের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা
ভাষা একটি জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি। এটি মানুষের চিন্তা, অনুভূতি এবং ইতিহাসের প্রতিফলন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ভাষা শুধু এককভাবে কথোপকথন বা যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয়, বরং এটি জাতির অস্তিত্ব, ইতিহাস, ও ঐতিহ্যের প্রতীক। যখন ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তখন বাংলাভাষী জনগণ তাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের জানিয়ে দেয় যে, ভাষার অধিকার রক্ষা করা, শুধুমাত্র ভাষা নয়, বরং একটি জাতির সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা রক্ষা করা।
২. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর ফলে, ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে ভাষা, সংস্কৃতি, এবং পরিচয় রক্ষার সংগ্রামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতীক হয়ে ওঠে। এই দিবসটি আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা এবং তাদের স্বীকৃতির প্রতি সম্মান জানাতে উদ্বুদ্ধ করে, যাতে কোন ভাষা বিলুপ্ত না হয় এবং প্রত্যেক ভাষাভাষী জনগণের অধিকার রক্ষা করা হয়। এটি বিশ্বব্যাপী ভাষা সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরার একটি প্রয়াস।
৩. জাতীয় ঐক্য ও প্রজন্মের মধ্যে সংযোগ
২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ঐক্য, সংহতি এবং প্রজন্মের মধ্যে সংযোগের শক্তিশালী একটি বার্তা দেয়। শহীদ ভাষা সৈনিকদের ত্যাগের মাধ্যমে আমরা দেখেছি, যে জাতি তাদের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে সক্ষম, সেই জাতি একাত্ম হয়ে দুর্বিষহ প্রতিকূলতাও অতিক্রম করতে পারে। এদিনটিতে ভাষা আন্দোলনের বীর সেনানীদের স্মরণ করে আমরা আমাদের ভাষার প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী করি। এটি আমাদের একে অপরের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক।
৪. ভাষার শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি
২১ শে ফেব্রুয়ারি শুধু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোই নয়, এটি ভাষার শিক্ষা এবং সচেতনতার একটি দিন। আমরা যখন এই দিনে ভাষার জন্য আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণ করি, তখন তা আমাদের মধ্যে ভাষার মূল্য সম্পর্কে নতুন করে সচেতনতা তৈরি করে। এটি আমাদের এই উপলব্ধি দিতে সহায়ক হয় যে, একটি ভাষা যদি তার নিজের মাতৃভাষী জনগণের কাছে মর্যাদা না পায়, তবে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের সবাইকে আমাদের ভাষা রক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহিত করে।
৫. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ঐতিহাসিক শিক্ষা
২১ শে ফেব্রুয়ারির বক্তব্য আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য শিক্ষা। এটি তাদের শেখায় যে, ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা থাকলে, তারা তাদের জাতির ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে আরও গভীরভাবে বুঝতে পারে। এভাবে, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তাদের আগ্রহ ও উদ্বুদ্ধতা তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে তাদের নিজেদের ভাষার প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদানে সহায়ক হবে।
উপসংহার
২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের শুধু একটি ভাষা রক্ষার ইতিহাসই নয়, বরং এটি আমাদের একতার, সংগ্রামের, এবং আত্মপরিচয়ের এক স্মারক। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ভাষার অধিকার একটি জাতির মৌলিক অধিকার, এবং এটি রক্ষা করতে কখনো অবহেলা করা যায় না। আমাদের জন্য এই দিবসটি প্রয়োজন, কারণ এটি আমাদের আত্মপরিচয়, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি উপায়, যা সমগ্র বিশ্বে ভাষা রক্ষার আন্দোলনকে উৎসাহিত করে।