https://www.varendratimes.com/

4915

politics

নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা চায় বিএনপি, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৯

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের কাছ থেকে এখনো নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি না পাওয়ায় স্পষ্ট বার্তা প্রত্যাশা করছে বিএনপি। দলটির দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি, বরং সময়সীমা নিয়ে সরকারের বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান ও নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরতে আজ সোমবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএনপি। বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি জানায়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে তারা অনড়। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে দলটি।

ড. ইউনূস ও তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সময়সীমা ঘিরে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে সংশয় বাড়ছে বলে মনে করছে বিএনপি। ফলে দলটি চায়, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে সময়সীমা জানিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিন এবং জাতির উদ্দেশে একটি পরিষ্কার বার্তা দিন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করবে বিএনপি। এসব আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে মঙ্গলবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ, বিভ্রান্তি দূরীকরণ এবং সরকারের প্রকৃত মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সংবিধান সংস্কার নিয়েও আলোচনা হবে।

বিএনপি অভিযোগ করছে, সংস্কার ইস্যুতে সরকার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দলটির নেতারা বলেন, যদি প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় অটল থাকেন, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচন নিয়ে চলমান ধোঁয়াশা নিরসনে রোডম্যাপ ঘোষণা অপরিহার্য। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তার আগের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চাই, যাতে জাতি নিশ্চিত হতে পারে এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রের সুযোগ না থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে।”

বিএনপি নেতাদের দাবি, দলটি আগেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে। সরকার যদি নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সংস্কারের কথা বলে, তবে তা জাতির জন্য হতাশাজনক হবে। কোনো কোনো দল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পেছাতে সংস্কারের কথা বলছে বলেও অভিযোগ করেছে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা মত দেন, বিএনপি যেহেতু সরকারের কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে, তাই তারা বৃহত্তর কোনো কর্মসূচিতে এখনই যেতে চায় না।

বিএনপি আশা করছে, রাজনৈতিক বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে। দ্রুত নির্বাচন দেশের সংকট নিরসন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়ক হবে বলে মনে করে দলটি।

সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, দলটিকে বিভ্রান্তিকর ব্যাখার মাধ্যমে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। বিএনপি ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের সংবিধানের চার মূলনীতি—আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, সামাজিক ন্যায়বিচার, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র—পুনর্বহালের পক্ষে। এতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে 'আল্লাহর ওপর আস্থা'কে স্থান দেওয়া হয়েছে, যা ১৯৭৯ সালের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছিল।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংশোধনের বাইরেও প্রয়োজনীয় সংস্কার অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ বা প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে করা সম্ভব। এজন্য অযথা সময়ক্ষেপণ অনুচিত।