https://www.varendratimes.com/

4922

politics

খালেদা জিয়ার আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা, বিএনপিতে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১২:২৩

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী বগুড়ায় সাতটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার দুইটি আসন—বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭। ঘোষিত প্রার্থীরা ইতোমধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন।

তবে খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচিত এই দুই আসনে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন—সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। স্থানীয় বিএনপি নেতারা ধারণা করছেন, আগের মতো এবারও জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হবেন। তা সত্ত্বেও কয়েকজন নেতা নিজ নিজভাবে মাঠে সক্রিয় আছেন।

জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন—বগুড়া-৬ (সদর) আসনে দলের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি গোলাম রব্বানী।

গত ৫ এপ্রিল শহীদ টিটু মিলনায়তনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মীদের এক প্রীতি সভায় প্রার্থিতার ঘোষণা দেন।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়া-৬ আসনটি বিএনপির জন্য ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। খালেদা জিয়া একাধিকবার এই আসনে প্রার্থী হলেও সাধারণত সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেননি, ফলে প্রতিবারই উপনির্বাচন হয়েছে। স্বাধীনতার পর এখানে ১৬ বার জাতীয় নির্বাচন ও উপনির্বাচনে বিএনপি ১০ বার জয়ী হয়েছে। বাকি বিজয়ীরা আওয়ামী লীগ তিনবার, জাতীয় পার্টি একবার, জামায়াত একবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার।

অন্যদিকে, বগুড়া-৭ আসনটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় এটিও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব বহন করে। এখানেও খালেদা জিয়া ও দলের শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হয়ে থাকেন। এই আসনে গত ১৫টি নির্বাচন ও উপনির্বাচনে বিএনপি ১০ বার, আওয়ামী লীগ দুইবার, জাতীয় পার্টি দুইবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার বিজয়ী হন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী মামলার কারণে আত্মগোপনে বা কারাবন্দি রয়েছেন। এদিকে নতুন দল এনসিপি এবং অন্য কিছু রাজনৈতিক শক্তি মাঠে সক্রিয় হয়েছে। কিছু প্রার্থী ইতোমধ্যে প্রচারণায় পোস্টারিংও শুরু করেছেন, যদিও এখনো তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়নি।

বগুড়া-৬ আসনে অধিকাংশ বিএনপি নেতা ও কর্মী চান খালেদা জিয়া এবারও প্রার্থী হোন। তবে তিনি প্রার্থী না হলে অন্তত চারজন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন: অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা এবং সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তবে তারা কেউই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতার ঘোষণা দেননি।

একই অবস্থা বগুড়া-৭ আসনেও। দলীয় নেতাকর্মীরা চান খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান প্রার্থী হোন। যদি জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচন না করেন, তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও গাবতলী উপজেলা সভাপতি মোরশেদ মিল্টন।

জামায়াতের প্রার্থী আবিদুর রহমান সোহেল বলেন, বগুড়াবাসীর সঙ্গে সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামে পাশে থেকেছি। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। তিনি আশা করেন, ভোটাররা তাকে বিজয়ী করবেন।

অপর প্রার্থী গোলাম রব্বানী জানান, তিনি বগুড়া-৭ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী এবং আত্মবিশ্বাসী যে, বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি খালেদা জিয়া প্রার্থী না হন, তবে তিনিই দলের মনোনয়ন চাইবেন। বগুড়ার জন্য তিনি দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন এবং খালেদা জিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রেজাউল করিম বাদশা বলেন, তিনি খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার পক্ষে, তবে প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন।

বগুড়া-৭ আসনের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী হেলালুজ্জামান লালু বলেন, আসনটি জিয়া পরিবারের, তারা না করলে দলের নির্দেশে তিনিও প্রার্থী হতে পারেন। তিনি অতীতে তিনবার উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এলাকার উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছেন।

মোরশেদ মিল্টন বলেন, তিনি দলের মনোনয়ন চান না, যদি জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হন। তবে নির্দেশ পেলে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন।

তবে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতের প্রার্থীদের নিয়ে তারা তেমন মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাদের মতে, খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে অন্য কোনো প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা আশাবাদী, তারা যে-ই প্রার্থী হোন না কেন, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকবেন।