https://www.varendratimes.com/

4931

special-report

দুই দশক ধরে বিএনপিকে লক্ষ্য করে অপপ্রচারে ব্যস্ত প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার

প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৪

গত দুই দশক ধরে বিএনপির বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গোষ্ঠী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দুটি সংবাদমাধ্যম ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে, এবং তারা কার্যত বিএনপির বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেছিল।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রথম আলোর অপপ্রচারে মূলত তিনটি দিক লক্ষ করা যায়:

প্রথমত, দুর্নীতির অভিযোগে ভিত্তিহীন প্রচার;

দ্বিতীয়ত, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের চেষ্টা;

তৃতীয়ত, আন্দোলন ও সংগঠনবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এই বিজয় অনেক ভারতপন্থী মহল মেনে নিতে পারেনি। ফলস্বরূপ, শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র, যার কেন্দ্রে ছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। এই মিডিয়াগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রচার শুরু করে।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রথম আলো বিএনপির বিরুদ্ধে এক হাজারের বেশি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার মধ্যে ৩৩৮টি ছিল লিড নিউজ। যদিও সংবাদপত্র দুর্নীতি বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করতেই পারে, কিন্তু প্রথম আলোর এসব রিপোর্টের অধিকাংশই ছিল অসত্য এবং ভিত্তিহীন—পরবর্তী তদন্তে যা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই ভ্রান্ত প্রচারণার জন্য তারা কোনোদিন দুঃখপ্রকাশ করেনি।

প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন ছিল: ‘পদে পদে দুর্নীতি, ফাইবার কেবল স্থাপন অনিশ্চিত’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি থমকে গেছে, অথচ দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে প্রমাণ হয় কোনো দুর্নীতি ঘটেনি। একইভাবে, পুলিশের নিয়োগ নিয়ে লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে প্রথম আলোর দাবি ছিল, তিনি রিমান্ডে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। অথচ আদালতের কোনো নথিতে এমন কোনো স্বীকারোক্তির অস্তিত্ব নেই।

বিশ্বব্যাংকের অর্থ ফেরত চাওয়ার মিথ্যা খবর, মন্ত্রীদের প্রকল্প গাড়ি ব্যবহারের নামে দুর্নীতির অভিযোগ কিংবা বিদ্যুৎ খাতে ব্যর্থতার মতো প্রচারণাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিত্রিত করা। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্তে এই অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

‘বিএনপি পল্লী’, ‘নাইকোর গাড়ি’, বা ‘৪৫ মন্ত্রী প্রকল্প গাড়ি ব্যবহার করছেন’ জাতীয় প্রতিবেদনগুলো সরাসরি দলীয় নেতাদের চরিত্র হননের জন্য তৈরি হয়েছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচক যখন আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়, তখন প্রথম আলো সেসব প্রতিবেদন গুরুত্বহীনভাবে ছাপে। অথচ বিএনপি আমলে একই বিষয় লিড নিউজ হয়।

এইভাবে প্রথম আলো বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন গল্প তৈরি করে, যা পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলা ও সাজা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অনেক নেতা বছরের পর বছর কারাভোগ করেন।

শুধু দুর্নীতি নয়, ২০০১ সাল থেকেই প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার বিএনপিকে জঙ্গিবাদে জড়িত দেখানোর প্রচারে নামেন। ‘বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়ে যাবে’—এই ভয় দেখিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা বা অন্যান্য জঙ্গি হামলার ক্ষেত্রে তারা বিএনপিকে জড়িয়ে প্রচারণা চালায়, যদিও সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ২১ আগস্ট মামলায় বিএনপির সংশ্লিষ্টতাকে ‘কল্পকাহিনি’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

২০০৭ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জঙ্গিবাদের মদদদাতা বিএনপির ৮ মন্ত্রী-সাংসদ’। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মিনু, দুলু, নাদিম মোস্তফা প্রমুখ, যাদের ছবি প্রথম পাতায় ছাপা হয়। এ ধরনের তথ্যহীন রিপোর্ট ছিল ভয়ানক অপসাংবাদিকতা।

এছাড়া জামায়াত-শিবিরকে কেন্দ্র করে ‘জিহাদে অনুপ্রেরণা’, ‘শিবির নেতা সালেহীকে সুযোগ দিয়েছে রাজশাহী পুলিশ’ কিংবা ‘বগুড়ায় গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার’—এই ধরনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরাসরি বিএনপি ও সরকারকে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা চলে।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পরিকল্পিতভাবে ‘বাংলা ভাই’, ‘মুফতি হান্নান’-এর মতো চরিত্র তৈরি করে বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিত্রিত করতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে এসব বক্তব্য ও ব্যাখ্যা ছিল মনগড়া ও অসত্য।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই এই দুটি সংবাদপত্র আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু, আন্দোলন নিয়ে হাস্যরস সৃষ্টি ও বিএনপির নেতাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করে তারা একটি পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান নিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই গণমাধ্যম গোষ্ঠী বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।