
https://www.varendratimes.com/
4940
rajshahi
প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ২২:০২
বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুমার শরৎকুমার রায়ের ১৪৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল চারটায় বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর হলরুমে এই আলোচনা ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- গ্রন্থাগারিক মোঃআসলাম রেজার সঞ্চালনায় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বরেন্দ্র গহেষণা জাদুঘরের পরিচালক প্রফেসর ড.কাজী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.সালেহ্ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের উপ-সচিব শফিউল ইসলাম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ওয়ালিউর রহমান বাবু। সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেরিটেজ, রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী প্রমুখ।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে কুমার শরৎকুমার রায়ের এই জাদুঘরের প্রতি অবদান, ব্যক্তিত্ব, সমাজ দেশ ও বাঙালিদের ইতিহাস উৎঘাটনসহ শিক্ষার তাৎপর্য আলোকপাত করা হয়।
উল্লেখ্য, কুমার শরৎকুমার রায় ছিলেন নাটোরের দিঘাপতিয়ার জমিদার বংশের সন্তান ও দয়ারামপুরের খ্যাতিমান রাজা। তিনি নিজে ও তার বংশের রাজা-মহারাজা-জমিদাররা ছিলেন ভীষণ বিদ্যানুরাগী ও প্রজাহিতৈষী। তারা বাংলার ইতিহাস-সংস্কৃতি, বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের লুপ্ত ইতিহাস-ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও বিকাশে রেখেছেন কৃতিত্বপূর্ণ অবদান।
‘রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন’, ‘রাজশাহী কলেজ’, ‘রাজশাহী সাধারণ পুস্তকালয়’ (বর্তমান রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরি) ও ‘বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম’— এই চারটি বুনিয়াদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের নাম জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে।
১৯১০ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’ গঠন করা হয়। তবে, এই সমিতি অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রথম গঠিত হয় সেই বছর এপ্রিলের প্রথম দিকে। আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন কুমার শরৎকুমার রায়। এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ও অনারারি সেক্রেটারি ছিলেন রমাপ্রসাদ চন্দ। সমিতির প্রথমদিকেই কলকাতা মিউজিয়ামের তদানীন্তন সুপারিন্টেনডেন্ট ইতিহাসবিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রামকমল সিংহসহ প্রখ্যাত ব্যক্তিরা মিলিত হন।
কুমার শরৎকুমার রায়ের বড়ভাই রাজা প্রমদানাথ রায় বাহাদুর মিউজিয়ামের জন্য ৫ বিঘা ২ কাঠা ২ ছটাক জমি কিনে তা ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’কে মিউজিয়াম তৈরির জন্য দান করেন এবং ভবিষ্যতে মিউজিয়াম সম্প্রসারণের জন্য জমি দান করেন বাবু দুর্গাদাস ভট্টাচার্য। এই জমির ওপর প্রধানত কুমার শরৎকুমার রায়ের অর্থে (৬৩ হাজার টাকা) ১৯১৬-১৯১৯ সালের মধ্যে নির্মিত হয় এক দৃষ্টিনন্দন ভবন।
১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর করেন। প্রাচীন গৌড়ের স্থাপত্যকলা অনুসরণ করে মিউজিয়াম ভবনের নকশা করেন কুমার শরৎকুমার রায়। ১৯১৯ সালে ২৭ নভেম্বর বাংলার গভর্নর লর্ড রোনাল্ডসে এই ভবনের দ্বারোদঘাটন করেন। এরপর মিয়াপাড়াস্থ পাবলিক লাইব্রেরিতে থাকা প্রত্ননিদর্শনগুলো বর্তমানের এই ভবনে এনে সংরক্ষণ ও সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।
কালক্রমে ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’ নাম রূপান্তরিত হয়ে ‘বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম’ হয়। এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করাকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা’ হিসেবে তখনই অভিহিত করেন ইতিহাসবিদরা। এরপর বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামের সুখ্যাতি চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।