https://www.varendratimes.com/

5019

bd-country

চাঁপাইনবাবগঞ্জে থোকায় থোকায় আম, দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা

প্রকাশিত : ২৫ মে ২০২৫ ১১:৪৭

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোতে ইতোমধ্যেই ঝুলছে থোকা থোকা আম। তবে এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম নামানোর নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই পরিপক্ব আম বাজারে আনতে পারবেন চাষিরা।

গত বছরের তুলনায় এবার আমের ফলন কিছুটা ভালো হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, এবারের মৌসুমে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০০ হেক্টর কম। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়—২০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে কম চাষ হয়েছে ভোলাহাট উপজেলায়, ৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ১০ দশমিক ৩ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

জেলার কৃষি বিপণন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে হিসাব করলে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চাষিরা জানাচ্ছেন, এবার প্রায় শতভাগ গাছে মুকুল আসলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গুটি আসেনি আশানুরূপ। শুরুতে মুকুল নষ্ট হয়ে যাওয়া ও খরার কারণে গুটি ঝরে পড়ায় অনেক গাছেই কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়নি।

আমচাষি গোলাম মোস্তাফা সুমন বলেন, “যেভাবে মুকুল এসেছিল, তেমনভাবে গাছে আম ধরেনি। খরায় গুটি ঝরে গেছে। ফলে ফলন তেমন ভালো হয়নি।” তবে কিছু বাগানে যেসব গাছে মুকুল ও গুটি টিকে আছে, সেখানে ভালো পরিমাণে আম ঝুলছে বলেও জানান তিনি।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনাম সবচেয়ে বেশি। এর স্বাদ ও ঘ্রাণের কারণে ভোক্তাদের বিশেষ আগ্রহ এই জেলার আম ঘিরে।

বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে তিন দফায় মুকুল আসে। আগেভাগে মুকুল আসা গাছগুলোর আম আগেই পেকে গেছে। গোপালভোগসহ কিছু জাতের আম বিচ্ছিন্নভাবে পাকতে শুরু করেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক জানান, “এবার গাছ থেকে আম নামানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। যেসব আম পাকবে, তা বাজারে তোলা যাবে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে গোপালভোগসহ কিছু আম বাজারে আসতে পারে।”

চলতি বছর স্বাভাবিকভাবেই বেশি ফলনের বছর হলেও আবহাওয়াজনিত কারণে প্রত্যাশিত ফলন হয়নি বলে জানান অনেক চাষি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরবরাহ বেড়ে গেলে আমের দাম কিছুটা কমতে পারে।

ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, “এখনও আম বাজারে ওঠেনি। তবে শুরুতে গুটি আম ৮০০ টাকা মণ, গোপালভোগ ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা মণ, আর ক্ষীরশাপাত ২,০০০ টাকা মণ দরে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী জানান, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার ভালো ফলনের আশা করছি। চলতি মাসের শেষ দিকে আম বাজারে উঠবে বলে মনে হচ্ছে।”

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোমিনুল হক বলেন, “আমরা আশা করছি এবছর প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। গড় দরে বিক্রি হলে বাণিজ্যের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে।”