
https://www.varendratimes.com/
5055
national
প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২৫ ১৭:৩৭
কৃষি প্রযুক্তি শুধু উন্নত করলেই হবে না, সেটি সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ — এই মন্তব্যের মাধ্যমে বক্তারা কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে গণমাধ্যম ও আধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে রাজশাহী কৃষি তথ্য সার্ভিসের আয়োজনে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কৃষির উন্নয়নে প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের মিলিত ভূমিকার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
সেমিনারের শিরোনাম ছিল “কৃষিই সমৃদ্ধি: কৃষি প্রযুক্তি বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা”। রাজশাহী কৃষি তথ্য সার্ভিসের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান, এবং সভাপতিত্ব করেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (RUET) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রোকনুজ্জামান। তিনি বলেন, “গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলে কৃষি প্রযুক্তির লাভজনক ফল দ্রুত ও সঠিকভাবে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।”
ড. রোকনুজ্জামান আরও যোগ করেন, “আমরা যদি ChatGPT কিংবা অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজ ও বোধগম্য ভাষায় কৃষি বিষয়ক তথ্য তৈরি করতে পারি, তবে তা কৃষকদের সময় ও খরচ বাঁচাতে এবং কার্যকরী পরামর্শ দিতে সহায়ক হবে।”
সেমিনারে বক্তারা কৃষির টেকসই উন্নয়নের জন্য ১৪টি সুপারিশ তুলে ধরেন। তাদের মতে, প্রযুক্তি তথ্যের উৎস, আর গণমাধ্যম হচ্ছে সেই তথ্যের বাহক। তাই কৃষি সংক্রান্ত তথ্যের যথাযথ যাচাই, উপস্থাপন এবং বিতরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা আধুনিক ও অংশগ্রহণমূলক করা প্রয়োজন।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
তথ্য যাচাই দলের গঠন: কৃষিভিত্তিক যেকোন তথ্য প্রচারের আগে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য বিশেষজ্ঞ একটি দল গঠন।
ডিজিটাল কৃষক গ্রুপ: ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ভিত্তিক কৃষক কমিউনিটি তৈরি, যেখানে কৃষকরা তাদের অভিজ্ঞতা, সমস্যা ও সমাধান শেয়ার করতে পারবেন।
IVR সেবা চালু: মোবাইল কলের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ ও সতর্কতা বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
সমবায় কৃষি মডেল: ক্ষুদ্র কৃষকদের একত্রিত করে সমবায় ভিত্তিক উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ডিজিটাল উৎস থেকে তথ্য প্রচার: সরকারি ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল ও মোবাইল অ্যাপ থেকে কৃষি তথ্য সংগ্রহ করে সঠিকভাবে প্রচার করা।
প্রযুক্তিনির্ভর মাঠ প্রদর্শনী: আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার মাঠপর্যায়ে প্রদর্শন।
সরকারি ইউটিউব চ্যানেল আপডেট: নিয়মিত ও নির্ভুল ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করা।
কল সেন্টার শক্তিশালীকরণ: কৃষকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন চালু করা।
সরকারি ফেসবুক পেজে কৃষি তথ্য: মৌসুমী সতর্কতা, রোগবালাই ও প্রকল্পের তথ্য নিয়মিত প্রকাশ।
‘কৃষক টিভি’ চালু করা: কৃষি বিষয়ক একটি নির্দিষ্ট টিভি চ্যানেল চালু করে প্রতিদিন কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান প্রচার।
সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: কৃষক, প্রশিক্ষক, প্রকৌশলী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং গবেষকদের মিলিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
ডিজিটাল কৃষক মাঠ স্কুল/ক্লাব: প্রত্যন্ত গ্রামে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি শিক্ষার কেন্দ্র স্থাপন।
আঞ্চলিক কৃষি এফএম রেডিও: স্থানীয় কৃষকদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক কৃষি সম্প্রচার।
ডিজিটাল কনটেন্ট টিম গঠন: তথ্যচিত্র, এনিমেশন ও ভিডিও তৈরিতে দক্ষ একটি দল গঠন।
কৃষিকথায় গ্রাহক সেবা সম্প্রসারণে অবদানের জন্য নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষি অফিসার তানভীর আহমেদ সরকারকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী এটিআই-এর প্রধান প্রশিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ হিল কাফি, রাজশাহীর বিনোদপুর ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার মো. শরিফুল ইসলামসহ বিভিন্ন সাংবাদিক ও কৃষি কর্মকর্তা।
সমাপনী বক্তব্যে কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান বলেন, “আমরা চাই কৃষি হোক আধুনিক, লাভজনক ও সম্মানজনক পেশা। এই লক্ষ্য অর্জনে গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তি ও মিডিয়াকে সমন্বিতভাবে কাজে লাগিয়ে কৃষকের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছালে শুধু উৎপাদনই বৃদ্ধি পাবে না, কৃষকের জীবনমানও উন্নত হবে।”
এই সেমিনার রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।