
https://www.varendratimes.com/
5094
world-news
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫ ২১:০৫
ইসরাইলের অবিরাম হামলা ও অবরোধের কারণে গাজায় কয়েক মাস ধরে খাদ্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শিশুরা এখন অপুষ্টি ও তীব্র অনাহারের মুখোমুখি। পরিস্থিতি ক্রমেই দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ গাজা উপত্যকাকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে খাদ্য সংকটগ্রস্ত ও ক্ষুধার্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধার্ত’ অবস্থায় রয়েছে, যা এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রতিফলন।
এখন পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, এক ব্যাগ আটার জন্য গাজার মানুষ যে কোনো প্রয়াস চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। খবর এসেছে গার্ডিয়ান ও আলজাজিরা থেকে।
ইসরাইলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে গাজার লোকজন তীব্র অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং দ্রুত সহায়তা না পেলে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছানোও এখন বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
গাজায় প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো প্রায় বন্ধের পথে। অল্পসংখ্যক ট্রাক ঢুকলেও সেখানে আসা খাদ্যের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি জানিয়েছেন, তারা প্রায় সময়ই খাবার পাচ্ছেন না। কারণ ত্রাণ সরবরাহের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। তারা বলছেন, এক ব্যাগ আটাও পেতে হলে তারা যেকোনো কাজ করতে বাধ্য।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, জর্ডানের আম্মানের গুদামে গাজার জন্য এক মাসের খাদ্য, চিকিৎসা ও মানবিক সামগ্রী মজুদ রয়েছে, যা প্রায় ২ লাখ মানুষের জন্য যথেষ্ট। তবে সীমান্ত বন্ধ থাকায় এসব ত্রাণ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানায়, বৃহস্পতিবার গাজার জন্য পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে সক্ষম হয়, যা গত চার দিনে প্রথম প্রবেশ। একই চেকপয়েন্ট থেকে আরও ৬০টি ট্রাক ছেড়ে যেতে পারলেও তীব্র সংঘর্ষের কারণে ট্রাকগুলোকে ফেরাতে হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, ক্রসিংয়ের আশপাশে সশস্ত্র সংঘাত চলছে, বিশেষ করে নো ম্যান্স ল্যান্ড নামে পরিচিত এলাকায়, যা চেকপয়েন্ট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। তিনি আরও বলেন, পাঁচটি ট্রাকে ছিল চিকিৎসা সরঞ্জাম, যা দেইর আল-বালাহয়ের ফিল্ড হাসপাতালে যাওয়া ছিল, কিন্তু আজ বেশিরভাগ সরবরাহ লুট হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ওসিএইচএ জানায়, প্রায় ৮০ দিন ধরে ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, ওষুধ, পানি ও জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে মানবিক চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। ২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরু থেকে গাজায় সর্বনিম্ন পরিমাণ সাহায্য পৌঁছাচ্ছে, যা ২৩ লাখ মানুষের চাহিদা মেটাতে অক্ষম।
ওসিএইচএ’র মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেন, গাজা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত এলাকা। এটি একমাত্র এমন এলাকা যেখানে পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। অর্থাৎ, জনসংখ্যার ১০০ শতাংশই দুর্ভিক্ষের মুখে।
লারকে জানান, ত্রাণ সরবরাহে ইসরাইলের অবরোধের কারণে গাজার ভিতরে ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে বাধা আছে। সামান্য অবরোধ শিথিল হলেও ৯০০ ট্রাক অপেক্ষমান রয়েছে, যার মধ্যে ৬০০ ট্রাক সীমান্তে পৌঁছেছে, কিন্তু ভেতরে খুব কম পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বিশ্ব ইতিহাসে এ ধরনের বাধার উদাহরণ খুবই কম। গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর সাথে সাথে মানুষের ভিড় জমছে।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথ প্রতিবেদন সতর্ক করেছে, গাজায় চরম খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে অনাহারে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা শতভাগে পৌঁছেছে।